পাঠকনন্দিত থ্রিলার সিরিজ ‘মাসুদ রানা’র লেখক কাজী আনোয়ার হোসেনের জানাজা সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারসংলগ্ন মসজিদ-ই-নূরে বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টায় জোহরের নামাজের পর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জানাজা শেষে তাকে বনানী কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার মায়ের কবরে তাকে সমাহিত করা হবে।
কাজী আনোয়ারের আত্মীয় এ বি এম সাদিক বলেন, “তিনি গত দুই বছর ধরেই কিছুটা অসুস্থতায় ভুগছিলেন। শেষ ছয় মাস বেশি অসুস্থ ছিলেন। নতুন করে লেখালেখি সে রকমভাবে করতে পারেননি৷ তিনি ডিমেনশিয়ায় ভুগছিলেন। করোনার সময়টাতে খুব রুটিনমতো চলতেন, কারও সঙ্গে তেমন দেখা করতেন না।”
সাদিক আরও বলেন, “মাসুদ রানার স্বত্ব দাবি করাতে তিনি একটু ভেঙে পড়েছিলেন। কারণ, যাকে তিনি কাজের সুযোগ করে দিয়েছেন, সেই যদি এমন করে তাহলে স্বাভাবিক তিনি সেটা ভালোভাবে নিতে পারবেন না। তবে তিনি এগুলো নিয়ে কখনোই ভাবতেন না।”
কাজী আনোয়ার হোসেনের চাচাতো ভাই কাজী রওনক হোসেন বলেন, “কাজী আনোয়ার ভাইয়ের শূন্যতা পূরণ করা সম্ভব না৷ যারা চলে যান তাদের কারও শূন্যতাই পূরণ করা যায় না। গতকাল মৃত্যুর পর তার ভক্তরা যেভাবে স্মৃতিচারণা করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তা অকল্পনীয়।”
তিনি আরও বলেন, “ওনাকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার বা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়নি, এতে তার বা তার পরিবার অসন্তুষ্ট নন। তিনি এমন কিছু কখনো প্রত্যাশাও করেননি। তিনি একজন নিভৃতচারী মানুষ ছিলেন। যখন অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ছিল না তখনো যেভাবে উনি তরুণদের উদ্দীপ্ত করেছেন সেটা এক অসাধারণ ব্যাপার।”
পরিবারের সদস্যরা জানান, নিজের সৃষ্টি মাসুদ রানার মতোই ‘মহামানব’ ছিলেন তিনি। দেশের কিশোর, তরুণদের বইমুখী করতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে সেবা প্রকাশনীর রহস্যপত্রিকা, মাসুদ রানা, ওয়েস্টার্ন, হরর গল্প আর তিন গোয়েন্দা সিরিজ।
কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই। তার পুরো নাম কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন। ডাকনাম ‘নবাব’। তার পিতা প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, মাতা সাজেদা খাতুন। তিনি ছিলেন একাধারে লেখক, অনুবাদক, প্রকাশক। জনপ্রিয় মাসুদ রানা সিরিজের স্রষ্টা তিনি। সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার হিসাবে তিনি ষাটের দশকের মধ্যভাগে মাসুদ রানা নামক গুপ্তচর চরিত্রকে সৃষ্টি করেন।
এর আগে ‘কুয়াশা’ নামক আরেকটি জনপ্রিয় চরিত্র তার হাতেই জন্ম নিয়েছিলো। কুয়াশা চরিত্রটি নিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেন প্রায় ৭৬টির মতো কাহিনি রচনা করেছেন। কাজী আনোয়ার হোসেন ছদ্মনাম হিসেবে বিদ্যুৎ মিত্র ও শামসুদ্দীন নওয়াব নাম ব্যবহার করতেন।